গুণ্ডাতন্ত্রের নির্বাচন


আমাদের দেশ ভারতবর্ষকে পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ গণতন্ত্র বলা হয় ; খাতাই কলমে অন্তত তাই লেখা। আমাদের সংবিধানে এই গণতন্ত্রকে সংরক্ষণের নানাবিধ আইন-কানুন রয়েছে। শুধু তাই নয় সংবিধান  যেভাবে আমাদের দেশের বর্ণনা দেওয়া আছে, সেরকম আমাদের দেশকে যদি আমরা বাস্তবে রুপায়ন করতে পারতাম, তাহলে হয়ত আজ আমাদের দেশ পৃথিবীর অন্যতম সেরা দেশ হত। কিন্তু সংবিধানকে মেনে চলা তো দূরের কথা, নিজেদের স্বার্থ, লোভ, অন্ধবিশ্বাস, নিজ নিজ জাতি বা ধর্মের শ্রেষ্ঠতা প্রকাশের উন্মত্ততা এসবের বশে আমরা ভারতবর্ষকে ক্রমশ রশাতলে নিয়ে চলেছি। দেশের এই ক্রমশ অধঃপতনের জন্য কোন বিশেষ বাক্তিগন বা কোন বিশেষ জাতিগণ দায়ী নয়, এরজন্য আমারা সাবাই দায়ী। যদিও আমরা নিজেরা নিজের দায়ভারকে স্বীকার করতে অনিছুক, বরং এর জন্য অন্য কারও উপরে দোষ চাপিয়ে তার অসহায়তায় মজা নিতে পছন্দ করি। "Unity", "Integrity" এই শব্দগুলো সংবিধানে আছে; কিন্তু আমরা আমাদের জীবনে এইগুলো ব্যবহার করতে নৈব নৈব চ - এই গুলোর ব্যবহার শুধুই মুখে, সৌজন্যের খাতিরে। বাস্তবে আমরা বিভক্ত ধর্ম, জাতি, শ্রেণী, বর্ণ, লিঙ্গ প্রভৃতিতে। অন্য ধর্ম বা জাতির বন্ধু, সহকর্মী থাকতে পারে কিন্তু ওইটুকুই ,মনের গহ্বরে অপর জাতি বা ধর্মাবলম্বী স্বদেশবাসীর স্থানটা কোথায় সেটা আমারা অধিকাংশই জানি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, খুন, ধর্ষণ, যৌন-নিগ্রহ এসবের খবর শুনলে নিজ ধর্মের মানুষের বিপর্যয়ে আমাদের হৃদয় ফেটে যায় কিন্তু একই জিনিস অন্য ধর্মের মানুষের অপর ঘটলে তখন হৃদয়ে সমবেদনার পরিমানটাও লক্ষণীয়ভাবে কমে যায়। এমনকি নিজ নিজ ধর্মের বা জাতির মধ্যেও আমরা বিভক্ত - হিন্দু , মুসলিম, সব ধর্মের ক্ষেত্রে একই। যেসব হিন্দু ভাবে যে মুসলিমরাই তাদের একমাত্র শত্রু, তারা এটা ভাবেনা যে তাদের নিজেদের ধর্মেই তাদের গ্রহণযোগ্যতা কোথায়- মানুষের মধ্যে কোন প্রকার ভেদাভেদ নেই এ কথা না হয় ছেড়েই দিলাম, একই ধর্মের মানুষ হয়েও উঁচু জাত- নিচু জাতের চরম ভেদাভেদ ; আর উঁচুজাতের মানুষের কাছে নিচুজাতের মানুষের গ্রহণযোগ্যতা নেই । যে মুসলিম ভাবে শুধুমাত্র সংখ্যালঘু  হওয়ার কারণে সংখ্যাগুরু হিন্দুদের  কাছে বৈষম্যের স্বীকার হতে হচ্ছে , তারাও এটা ভাবেনা যে তাদের নিজ ধর্মে তাদের অবস্থান কোথায় - সুন্নি-শিয়া তো আছেই, তাছাড়া এদের মধ্যেও আলাদা আলাদা ভাগ, আর প্রত্যেকের কাছে প্রত্যেকের গ্রহণযোগ্যতা কেমন সেটা নিরপেক্ষ চোখে দেখলেই বোঝা যাই। অন্ধবিশ্বাসের ধোঁয়াশায় আমরা আসলে যুক্তিশক্তি হারিয়ে বিভ্রমে বেঁচে আছি । আর এর সুযোগ কিছু ক্ষমতালোভী মানুষ নেবেই এটাই তো স্বাভাবিক। 

ভোট চলছে; সাধারণ মানুষ দর্শক আর ওইসব ক্ষমতালোভী মানুষগুলো খেলছে l জিতবে ওরাই , সাধারাণ মানুষ শুধুমাত্র দর্শকই থাকবে। নতুন কেউ আসুক বা যে আছে সে থাকুক, মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত আর হবে না। গরিব আরও গরিব হবে, ধনী আরও ধনী; মানুষ তার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকবে, শিক্ষিতরা বাধ্য থাকবে অশিক্ষিতের কথায় উঠতে-বসতে; নিরীহ মানুষ নিপীড়িত হবে, গুণ্ডারাজ যেমন চলছে চলতে থাকবে - সত্যের গলাটিপে মারা হবে দিনের পর দিন। আর আমরা ধর্মের ফিতে চোখে বেঁধে ভোট দিয়ে ওই মানুষগুলোকে লুটেপুটে খাওয়ার সুযোগ করে দেবো,যারা দিনের পর দিন আমাদের দেশকে ধ্বংস করে যাচ্ছে। এই ভাবে বছরের পর বছর ওরা আমাদের অন্ধবিশ্বাসে লাভবান হবে; আর আমরা ওদের সুবিধার্থে পুরনো অযৌক্তিক অন্ধবিশ্বাসগুলোকে সযত্নে মনের মধ্যে আগলে রেখে নিজের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির ভ্রান্ত খেলায় মত্ত থাকবো। আসল দোষী তাহলে কারা? আমরা না নেতারা?


~ইমরান 


Comments

Post a Comment

Popular Posts